Category: সাধারণ বিজ্ঞান

General Science

  • ৭ বীরশ্রেষ্ঠের পরিচয় ও মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান

    ৭ বীরশ্রেষ্ঠের পরিচয় : বাংলা ভূমির হাজার বছরের ইতিহাসে ১৯৭১ এক অনন্য মাইলফলক। এর আগেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রে বাঙালি জাতি বিভেদ ভুলে এক হতে শুরু করেছিল। পরবর্তীতে নেতৃত্বের জাদুকরী শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে বাঙালি জাতি পেয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ। একাত্তরে এক নেতা এক দেশ, শেখ মুজিবের বাংলাদেশ’ এই ছিল তার পরিচয়। সেদিন ‘জয় বাংলা’র মন্ত্রে এই ছিল উজ্জীবিত। ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আলোচিত আত্মত্যাগ করেন ৭ বীর সন্তান। বিজয়ের এই মাসে বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে আমাদের এই বিশেষ আয়ােজন….

    বীরশ্রেষ্ঠ মােহাম্মদ মােস্তফা কামাল

    বীরত্বের ঘটনা

    মােহাম্মদ মােস্তফা কামাল ১৬ ডিসেম্বর ১৯৬৭ বাড়ি থেকে পালিয়ে ইস্ট গেল রেজিমেন্টে যােগ দেন। তিনি প্রশিক্ষণ শেষে কুমিল্লার ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিয়ােগ পান। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পূর্বে তিনি অবৈতনিক ল্যান্স নায়েক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালের উত্তাল জনৈতিক পরিবেশে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে অভ্যন্তরীণ গােলযােগ নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মােতায়েন করে।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    পাকিস্তানি চক্রান্ত বুঝতে পেরে কয়েকজন বাঙালি সৈনিককে সঙ্গে নিয়ে মেজর শাফায়াত জামিল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লে. কর্নেল খিজির হায়াত খানসহ সকল পাকিস্তানি অফিসার ও সেনাদের গ্রেপ্তার করেন। এরপর তারা মেজর খালেদ মােশারফের নেতৃত্বে আশুগঞ্জ, উজানিস্বর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এন্ডারসন খালের পাশ দিয়ে শিক্ষা অবস্থান নেন। ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টার গানশিপ, নেভাল গানবােট ও এফ-৮৬ বিমানযােগে মুক্তিবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়।

    গঙ্গাসাগর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দরুইন গ্রামে নিয়ােজিত আলফা কোম্পানির ২নং প্লাটুনের একজন সেকশন কমান্ডার ছিলেন মােস্তফা কামাল। ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে পাকবাহিনী তীব্র গােলাবর্ষণ শুরু করে প্লাটুন পজিশনের ওপর। আক্রমণের খবর পেয়ে মেজর শাফায়াত অবস্থানকে আরাে শক্তিশালী করতে হাবিলদার মুনিরের নেতৃত্বে ডি কোম্পানির ১১ নম্বর প্লাটুন পাঠান। সারাদিন যুদ্ধ চলে।

    জন্ম ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৭
    মৃত্যু১৮ এপ্রিল ১৯৭১
    জন্মস্থানহাজীপুর , দৌলতখান, ভােলা।
    যােদ্ধা২নং সেক্টর
    যুদ্ধআখাউড়ার দরুইন গ্রামে।
    পদবিসিপাহি
    কর্মস্থলপাকিস্তান সেনাবাহিনী
    সমাধিদরুইন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
    বিশেষ তথ্যবীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রথম শহিদ।

    ১৮ এপ্রিল সকালে শত্রুবাহিনী দরুইন গ্রামের কাছে পৌঁছে যায়। দুপুর ১২টায় অবস্থানের পশ্চিমদিক থেকে মূল আক্রমণ শুরু হয়। শত্রু বাহিনীর একটি দল প্রতিরক্ষার পিছন দিক দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিবাহিনী দরুইন গ্রাম থেকে আখাউড়া রেল স্টেশনের দিকে পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নিরাপদে সেখান থেকে সরে আসতে হলে তাদের প্রয়ােজন ছিল নিরবচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। মােস্তফা কামাল সহযােদ্ধাদের জানান যে, তিনি নিজে এই কাভারিং ফায়ার করবেন এবং সবাইকে পিছনে হটতে নির্দেশ দেন। সহযােদ্ধারা মােস্তফাকেও পশ্চাদপসরণের অনুরােধ করেন কিন্তু তিনি ছিলেন অবিচল।

    মােস্তফার গুলিবর্ষণে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রায় ২০-২৫ জন হতাহত হয় এবং তাদের অগ্রগতি মন্থর হয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে তাঁর অবস্থানের ওপর মেশিনগান এবং মর্টারের গােলাবর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে মোস্তফা কামালের এলএমজির গুলি নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তিনি মারাত্মক জখম হন।

    তখন পাকসৈন্যরা ট্রেঞ্চে এসে তাঁকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনি প্রথম শহিদ হন। রুইন গ্রামের জনগণ মােস্তফা কামালকে তাঁর শাহাদত বরণের স্থানের পাশেই সমাহিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে।

    বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ

    বীরত্বের ঘটনা

    ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর-এর ১৫০ জন সৈনিককে দায়িত্ব দেওয়া হয় রাঙামাটি-মহালছড়ি নৌপথে নিরাপত্তাব্যুহ তৈরির এই দলের এক নম্বর এলএমজি চালক মুন্সী আবদুর রউফ ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের নানিয়ারচর উপজেলাধীন বাকছডির একটি বাঙ্কারে।

    ৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২ নং কমান্ডাে ব্যাটালিয়নের দুই কোম্পানি সৈনিক ৭টি স্পিডবােট ও ২টি লঞ্চ সহযােগে রাঙামাটি-মহালছড়ি নৌপথের আশেপাশে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর অবস্থান আঁচ করে লঞ্চ থেকে তাদের অবস্থানের ওপর মর্টারে গােলাবর্ষণ শুরু। করে। এই অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এই সুযােগে কিছু পাকিস্তানি সৈন্য তীরে নেমে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ঘিরে ফেলে।

    জন্ম৮ মে ১৯৪৩
    মৃত্যু২০ এপ্রিল ১৯৭১
    জন্মস্থানসালামতপুর, বােয়ালমারী , ফরিদপুর।
    যােদ্ধা১নং সেক্টর
    যুদ্ধরাঙামাটি-মহালছড়ি নৌপথে
    পদবিল্যান্সনায়েক
    কর্মস্থলইপিআর
    সমাধিরাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর

    ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান পিছনে হটার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নিরাপদে অবস্থান ত্যাগের জন্য প্রয়ােজন নিরবচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। আবদুর রউফের এলএমজির কাভারিং ফায়ারে দায়িত্ব দিয়ে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান তাঁর সৈন্যদের নিয়ে পিছনে হটতে থাকেন। তাঁর অব্যর্থ গুলিতে স্পিডবােটগুলাে ডুবে যায় এবং সেগুলােতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যরা হতাহত হয়। বাকি সৈন্যরা লঞ্চ দুটিতে করে পালাতে থাকে।

    পাক সৈন্যরা এলএমজির রেঞ্জের বাইরে গিয়ে লঞ্চ থেকে মর্টারে গােলাবর্ষণ করতে থাকে। অসমসাহসী আবদুর রউফ তখনাে গুলি চালানাে অব্যাহত রেখেছিলেন। অকস্মাৎ শত্রুর একটি গােলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর দেহ। সহযােদ্ধারা পরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে নানিয়ারচরের চিংড়ি খাল সংলগ্ন একটি টিলার ওপর সমাহিত করেন।

    মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ও আত্মদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে। বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৭৩ সালে মুন্সী আবদুর রউফকে অনারারি ল্যান্স নায়েক পদে মরণােত্তর পদোন্নতি দান করে।

    বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান

    বীরত্বের ঘটনা

    ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ছুটিতে এসে মতিউর রহমান স্থানীয়ভাবে মুক্তিযােদ্ধাদের সংগঠিত করেন। ভৈরবে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। পরে পারিবারিক চাপে মে মাসে তিনি পাকিস্তান চলে যান।

    সেখানে তিনি বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল বিমান ছিনতাই করে সেটি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেবেন। ২০ আগস্ট সকালে করাচির মাশরুর বিমানঘাঁটি থেকে পাইলট অফিসার মিনহাজ রশিদের টি-৩৩ বিমান নিয়ে উড়বার সিডিউল ছিল।

    জন্ম২৯ অক্টোবর ১৯৪১
    মৃত্যু২০ আগস্ট ১৯৭১
    জন্মস্থানপৈতৃক নিবাস রায়পুরা, নরসিংদী।
    পদবিফ্লাইট লেফটেন্যান্ট
    কর্মস্থলপাকিস্তান বিমানবাহিনী।
    সমাধিপাকিস্তানের করাচির মৌরিপুর মাশরুর ঘাঁটি। পরবর্তীতে ২৫ মার্চ ২০০৬ তাঁর দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পূর্ণ মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

    মতিউর ছিলেন তার প্রশিক্ষক। এ বিমানের সাংকেতিক নাম ছিল ‘ব্লু বার্ড’। প্রশিক্ষণকালে মতিউর বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। বিমানটি বিধ্বস্ত হয় ভারতীয় সীমান্তের কাছে থাট্টায়। মতিউরের মৃতদেহ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পাওয়া গেলেও মিনহাজের লাশ পাওয়া যায়নি।

    বিশেষ তথ্য :

    • মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি টি-৩৩ বিমান (ছদ্মনাম ‘ব্লু-বার্ড) ছিনতাই করে দেশে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় শহিদ হন।
    • তাঁর জীবনের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রের নাম ‘অস্তিত্বে আমার দেশ।
    যুদ্ধ :

    পাকিস্তানের মাশরুর বিমানঘাঁটিতে টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান ছিনিয়ে নিয়ে ভারতীয় সীমান্তের উদ্দেশে যাত্রা। এ টিভির পর্দায় মতিউর রহমান। মতিউর রহমানকে নিয়ে ২০০২ সালে ‘অগ্নিবলাকা’ নামে একটি ডকুড্রামা নির্মাণ করা হয়, যেখানে রিয়াজ মতিউর রহমানের চরিত্রে এবং তারিন তার স্ত্রী মিলির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া তার জীবনী নিয়ে ২০০৭ সালে ‘অস্তিত্বে আমার দেশ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।

    সম্মাননা

    মতিউর রহমানের দেশপ্রেম ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৩ তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যশাের বিমানঘাটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে।

    বীরশ্রেষ্ঠ নূর মােহাম্মদ শেখ

    বীরত্বের ঘটনা

    ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে নূর মােহাম্মদ শেখ মুক্তিবাহিনীতে যােগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি যশোর ৮নং সেক্টরে যুদ্ধরত ছিলেন। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ যুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যুহের সামনে যশাের জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে তাঁকে অধিনায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানাে হয়।

    জন্ম২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬
    মৃত্যু৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
    জন্মস্থানমহিষখােলা, নড়াইল
    যােদ্ধা৮নং সেক্টর
    যুদ্ধযশােরের শার্শার বয়রায়
    পদবিল্যান্সনায়েক
    কর্মস্থলইপিআর
    সমাধিযশােরের কাশিপুর গ্রামে।

    সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঠাৎ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযােদ্ধারা পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। সিপাহি নানু মিয়া গুলিবিদ্ধ হলে নূর মােহাম্মদ তাঁকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এলএমজি দিয়ে এলােপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গােলা এসে তার ডান কাঁধে লাগে।

    তিনি শত্রুদের ঠেকিয়ে রাখার দায়িত্ব নেন এবং অন্য সঙ্গীদের চলে যেতে অনুরােধ করেন। তিনি সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন। শত্রুপক্ষ এই বীর যােদ্ধাকে বেয়নেট চার্জ করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে এবং মস্তক বিদীর্ণ করে ঘিলু ছড়িয়ে ফেলে। পরবর্তীতে পাশের একটি ঝাড় থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে। যশোরের কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।

    সম্মাননা

    নূর মােহাম্মদের দেশপ্রেম ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৩ তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

    বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান

    বীরত্বের ঘটনা

    হামিদুর রহমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে ধলই নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীতে যােগ দেন। পাকসেনাদের ধলই সীমান্ত ঘাঁটির সামরিক গুরুত্বের কারনে মুক্তিযােদ্ধারা ঘাঁটিটি দখলের পরিকল্পনা করে। প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘সি’ কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দেওয়া।

    জন্ম২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩
    মৃত্যু২৮ অক্টোবর ১৯৭১
    জন্মস্থানমহেশপুর, ঝিনাইদহ
    যােদ্ধা৪নং সেক্টর
    পদবিসিপাহি
    কর্মস্থলপাকিস্তান সেনাবাহিনী।
    সমাধিভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামে। পরবর্তীতে ১১ ডিসেম্বর ২০০৭ তাঁর দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পূর্ণ মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
    বিশেষ তথ্যবীরশ্রেষ্ঠ খেতাপ্রাপ্তদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ

    হামিদুর ছিলেন এই কোম্পানির সদস্য। ২৮ অক্টোবরের পূর্ণতে মুক্তিযােদ্ধাদের তিনটি প্লাটুন পাকসেনাদের ঘাঁটি অভিমুখে অগ্রসর হয়। ঘাঁটির কাছাকাছি এলে অকস্মাৎ একটি মাইন বিস্ফোরণের শব্দে শত্রুপক্ষ সচকিত হয়ে এলােপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে হামিদুর শত্রুর এএমজি পােস্ট ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাঁর দলকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রেনেড হাতে রাতের অন্ধকারে হামাগুড়ি দিয়ে শত্রুর এলএমজি পােস্টের দিকে অগ্রসর হন এবং রাতের শেষ প্রহরে গ্রেনেড ছুড়ে দুই এলএমজি চালককে হত্যা করেন। কিন্তু নিজে তিনি শত্রুপক্ষের গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মুক্তিযােদ্ধারা তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসায় সমাহিত করেন।

    সমাধি স্থানান্তর

    হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্পদূরে ভারতীয় ভূখণ্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গােরস্থানে দাফন করা হয়। নিচু স্থানে অবস্থিত কবরটি একসময় পানিতে তলিয়ে যায়। ২৭ অক্টোবর ২০০৭ বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১০ ডিসেম্বর ২০০৭ বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সিমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করে এবং যথাযােগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে কার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

    বীরশ্রেষ্ঠ মাে. রুহুল আমিন

    বীরত্বের ঘটনা

    ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রুহুল আমিন এপ্রিল মাসে ত্রিপুরা সীমান্ত। অতিক্রম করে ২নং সেক্টরে যােগদান করেন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি | বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে সকল সেক্টর থেকে প্রাক্তন নৌ-সেনাদের আগরতলায় সংগঠিত করে নৌবাহিনীর প্রাথমিক কাঠামাে গঠন করা হয়। পরে তাদের কলকাতায় আনা হয়।

    সেখানে সবার সাথে রুহুল আমিনও ছিলেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি টাগবােট উপহার দেয়। এগুলােকে কলকাতার গার্ডেন রিচ নৌ-ওয়ার্কশপে দুটি বাফার গান ও মাইন-পড জুড়ে গানবােটে রূপান্তর করা হয়। গানবােট দুটির নামকরণ করা হয় ‘পদ্ম’ ও ‘পলাশ’ ।

    জন্ম১ জুলাই ১৯৩৫
    মৃত্যু১০ ডিসেম্বর ১৯৭১
    জন্মস্থানবাঘপাঁচড়া, নােয়াখালী
    যােদ্ধা১০নং সেক্টর
    যুদ্ধরূপসা নদী (গানবােট পলাশ)
    পদবিইঞ্জিনরুম আর্টিফিশার
    কর্মস্থলনৌবাহিনী
    সমাধিমােংলার রূপসা নদীর পাড়ে

    রুহুল আমিন নিয়ােগ পান লাশের ইঞ্জিনরুম আর্টিফিশার হিসেবে। ৬ ডিসেম্বর মােংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাটি পিএনএস তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে ‘পদ্মা’, ‘পলাশ ও মিত্রবাহিনীর গানবােট পানভেল’ ভারতের হলদিয়া নৌঘাঁটি থেকে রওনা হয়।

    ৮ ডিসেম্বর সুন্দরবনের আড়াই বানকিতে বিএসএফের পেট্রোল ক্রাফট ‘চিত্রাঙ্গদা’ তাদের বহরে যােগ দেয়। ৯ ডিসেম্বর কোনাে বাধা ছাড়াই তারা হিরণ পয়েন্টে প্রবেশ করেন। পরদিন ১০ ডিসেম্বর ভাের ৪টায় তারা মােংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকাল ৭টায় কোনাে বাধা ছাড়াই তারা মােংলায় পৌঁছান। পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা মােংলাতেই অবস্থান নেয় এবং পানভেল, পদ্মা ও পলাশ সামনে অগ্রসর হতে থাকে। দুপুর ১২টায় তারা খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌঁছান।

    এ সময় আকাশে তিনটি জঙ্গিবিমান দেখা যায়। পদ্ম ও পলাশ থেকে বিমানের ওপর গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলাে ভারতীয় বলে জানান। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিমানগুলাে পদ্মা ও পলাশের ওপর গুলি ও বােমাবর্ষণ শুরু করে। পলাশের কমান্ডার সবাইকে গানবােট ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু রুহুল আমিন পলাশেই অবস্থান নেন এবং আপ্রাণ চেষ্টা চালান গানবােটকে সচল রাখতে।

    হঠাৎ শক্রর একটি গােলা পলাশের ইঞ্জিনরুমে আঘাত করে এবং তা ধ্বংস হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে রুহুল আমিন নদীতে লাফিয়ে পড়েন এবং আহত অবস্থায় কোনােক্রমে তীরে উঠতে সক্ষম হন। দুর্ভাগ্যক্রমে তীরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে তার লাশ ১৭ ডিসেম্বর রূপসার পাড়ে সমাহিত করা হয়।

    সম্মাননা

    মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

    বিশেষ তথ্য

    বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে একমাত্র নৌবাহিনীর সদস্য বীরশ্রেষ্ঠ মাে. রুহুল আমিন।

    বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

    বীরত্বের ঘটনা

    মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ছিলেন ৭নং সেক্টরের মেহেদিপুরের (মালদহ জেলায়) সাব-সেক্টরের কমান্ডার। এ সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান ৭নং সেক্টরের সেক্টর-কমান্ডার ছিলেন। মহিউদ্দিন পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কানসার্ট, আরগরার হাট ও শাহপুরসহ কয়েকটি সফল অভিযানে অসাধারণ নৈপুণ্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। ফলে ডিসেম্বর মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের জন্য তাঁকে একটি মুক্তিযােদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেওয়া। হয়।

    জন্ম৭ মার্চ ১৯৪৯
    মৃত্যু১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
    জন্মস্থানরহিমগঞ্জ, বরিশাল
    যােদ্ধা৭নং সেক্টর
    যুদ্ধচাঁপাইনবাবগঞ্জ
    পদবিক্যাপ্টেন
    কর্মস্থলসেনাবাহিনী
    সমাধিচাঁপাইনবাবগঞ্জ
    বিশেষ তথ্যবীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে সর্বশেষ শহিদ।

    ১৩ ডিসেম্বর প্রত্যুষে তিনি এক প্লাটুন মুক্তিযােদ্ধাসহ রেহাইচরের মধ্য দিয়ে নৌকাযােগে মহানন্দা নদী পার হন এবং অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুর বেশ কয়েকটি বাঙ্কার দখল করে নেন। পাকিস্তানি বাহিনী তখন পশ্চাদপসরণ করে নওয়াবগঞ্জ শহরে অবস্থান নেয় এবং একটি দালানের ছাদ থেকে মেশিনগানে অনবরত গুলি চালিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের শহরাভিমুখে অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখে।

    এই সংকটময় সময়ে মহিউদ্দিন শত্রুর মেশিনগান ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন। তিনি বা হাতে এসএমজি ও ডান হাতে একটি গ্রেনেড নিয়ে গােপনে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসেন। হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তা পার হয়ে তিনি দ্রুত মেশিনগানবাহী বাড়িটির দিকে ধাবিত হন। ত্বরিতগতিতে তিনি মেশিনগান বরাবর গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। বিস্ফোরিত গ্রেনেডের আঘাতে মেশিনগানের স্থলটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়।

    অকস্মাৎ রাস্তার পাশের একটি দোতলা বাড়ি থেকে শক্রর একটি গুলি তাঁর কপালে বিদ্ধ হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এতে হতােদ্যম না হয়ে মুক্তিযােদ্ধারা সন্ধ্যার দিকে শত্রুর অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। গভীর রাত পর্যন্ত এ আক্রমণ অব্যাহত ছিল। পাকসেনারা শেষ পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে নওয়াবগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ভাের রাতে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ উদ্ধার করে তাঁকে ছােটো সােনা মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। 

    সম্মাননা

    মুক্তিযুদ্ধে বীরােচিত ভূমিকা ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

  • সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে গুরুত্বপূর্ণ ৫০টি প্রশ্নোত্তর পর্ব- ০১

    ## বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল কোনটি?
    === চলন বিল।

    ## বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ সংবিধানের কোন তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে?
    === পঞ্চম তফসিলে।

    ## আসাদ গেট কোন স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত?
    === ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান।

    ## জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপর নাম কী?
    === সম্মিলিত প্রয়াস।

    ## বাংলাদেশের প্রথম মহিলা বিচারপতির নাম কি?
    === নাজমুন আরা সুলতানা।

    ## সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য ছিলেন কে?
    === বেগম রাজিয়া বানু।

    সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে গুরুত্বপূর্ণ ৫০টি প্রশ্নোত্তর পর্ব- ০১

    ## পদ্মা সেতু কোন দু’টি জেলাকে সংযুক্ত করেছে?
    === মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর।

    ## বাংলাদেশের সর্বাধিক চা বাগান কোন জেলায় অবস্থিত?
    === মৌলভীবাজার।

    ## রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন?
    === জাতীয় সংসদের স্পিকার।

    ## বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন মোট কত দিন?
    === ৪৬৮২ দিন।

    ## বাংলাদেশের পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কোথায় অবস্থিত?
    === রাজারবাগ, ঢাকা।

    ## বাংলাদেশের শিশু আইন প্রণীত হয় কত সালে?
    === ১৯৭৪ সালে।

    ## মুক্তিযুদ্ধের আত্মসমর্পণ দলিল কোথায় স্বাক্ষরিত হয়?
    === রেসকোর্স ময়দানে।

    ## আয়তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা কোনটি?
    === পার্বত্য রাঙামাটি।

    ## বাংলাদেশের কোন জেলাটির নামকরণ করা হয়েছে একটি নদীর নাম অনুসারে?
    === ফেনী।

    ## বাঙালি ও যমুনা নদীর সংযোগ কোথায় হয়েছে?
    === বগুড়ায়।

    ## রাখাইন উপজাতিদের অধিক বাস কোন জেলায়?
    === কক্সবাজার জেলায়।

    ## আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কত তম?
    === ৯০ তম।

    ## বাংলাদেশের প্রথম নারী প্যারাট্রুপার কে?
    === জান্নাতুল ফেরদৌস।

    ## কিয়োটো প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল কত সালে?
    === ১৯৯৭ সালে।

    ## ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ গানটির গীতিকার কে?
    === গোবিন্দ হালদার।

    ## বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকার নাম কী?
    === উত্তরাধিকার।

    ## বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত দ্বীপ কোনটি?
    === কুতুবদিয়া।

    ## বাংলাদেশের প্রথম নিরক্ষরতামুক্ত গ্রাম কোনটি?
    === কচুবাড়ির কৃষ্টপুর, ঠাকুরগাঁও।

    ## ‘রূপসী বাংলাদেশ’ কোন এলাকাকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে?
    === সোনারগাঁয়ের জাদুঘর এলাকাকে।

    ## বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার নকশা কে তৈরি করেন?
    === শিব নারায়ণ দাস।

    ## মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেয়া হয় কয়টি?
    === ৪টি।

    ## বাংলা মুদ্রাক্ষরের জনক কে?
    === চার্লস উইলকিনস।

    ## বাংলাদেশের প্রথম মুদ্রা চালু হয় কত সালে?
    === ৪ মার্চ, ১৯৭২ সালে।

    ## ‘জীবন তরী’ কী?
    === একটি ভাসমান হাসপাতাল।

    ## বাংলাদেশ বিমানের প্রতীক কী?
    === উড়ন্ত বলাকা।

    ## ‘নজরুল মঞ্চ’ কোথায় অবস্থিত?
    === বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে।

    ## বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর কোন মন্ত্রণালয়ের অধীন?
    === প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন।

    ## মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে?
    === নওয়াব আবদুল লতিফ।

  • ডিসেম্বর মাসের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস ও প্রতিপাদ্য বিষয়

    ডিসেম্বর মাসের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস ও প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো। এছাড়াও ডিসেম্বর মাসের সচেতনতা মাস ও গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

    ডিসেম্বর মাসের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ

    ০১ ডিসেম্বরবিশ্ব এইডস দিবস। প্রতিপাদ্য- সমতার বাংলাদেশ, এইডস ও অতিমারি হবে শেষ।
    ০১ ডিসেম্বরমুক্তিযােদ্ধা দিবস
    ০২ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক দাসতৃবিলােপ দিবস। প্রতিপাদ্য- দাসত্ব বর্ণবাদের উত্তরাধিকার বিলােপ বৈশ্বিক
    ন্যায়বিচারের জন্য বাধ্যতামূলক
    ০৩ ডিসেম্বর৩০তম আন্তর্জাতিক ও ২৩তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। প্রতিপাদ্য— কোভিড়ােত্তর বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ।
    ০৪ ডিসেম্বরজাতীয় বস্ত্র দিবস। প্রতিপাদ্য- বস্ত্রখাতের বিশ্বায়ন: বাংলাদেশের উন্নয়ন।
    ০৪ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক ব্যাংক দিবস
    ০৫ ডিসেম্বরবিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। প্রতিপাদ্য- লবণাক্ততা রােধ করি, মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করি।
    ০৫ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক নিনজা দিবস।
    ০৫ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস। প্রতিপাদ্য- Volunteer now for our common future
    ০৭ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস। প্রতিপাদ্য- Advancing Innovation for
    Global Aviation Development

    আরো পড়ুন : নভেম্বর মাসের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    ০৯ ডিসেম্বরবেগম রােকেয়া দিবস।
    ০৯ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরােধী দিবস। প্রতিপাদ্য– আপনার অধিকার, আপনার দায়িত্ব : দুর্নীতিকে না বলুন।
    ০৯ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরােধ দিবস।
    ১০ ডিসেম্বরজাতীয় ভ্যাট দিবস। প্রতিপাদ্য- অনলাইনে ভ্যাট দিন, দেশ গড়ায় অংশ নিন।
    ১০ ডিসেম্বরবিশ্ব মানবাধিকার দিবস। প্রতিপাদ্য— বৈষম্য ঘােচাও, সাম্য বাড়াও, মানবাধিকারের সুরক্ষা দাও।
    ১১ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। প্রতিপাদ্য— টেকসই পর্বত পর্যটন।
    ১২ ডিসেম্বর৫ম ডিজিটাল বাংলাদেশ দিস। প্রতিপাদ্য- ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন, উপকৃত সকল জনগণ।
    ১২ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস। প্রতিপাদ্য—কাউকে বাদ রেখে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনিয়ােগ করা।
    ১২ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক নিরপেক্ষতা দিবস।
    ১৪ ডিসেম্বরশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।

    আরো পড়ুন : বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (AD) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান

    ১৬ ডিসেম্বরমহান বিজয় দিবস।
    ১৮ ডিসেম্বরবাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট দিবস।
    ১৮ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। প্রতিপাদ্য— শতবর্ষে জাতির পিতা, সুবর্ণে স্বাধীনতা, অভিবাসনে আনবাে মর্যাদা ও নৈতিকতা।
    ১৮ ডিসেম্বরআরবি ভাষা দিবস।
    ১৯ ডিসেম্বরবাংলা ব্লগ দিবস।
    ২০ ডিসেম্বরবর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB) দিবস।
    ২০ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক মানবিক সংহতি দিবস। প্রতিপাদ্য—Cultural equality, Social justice (প্রতিপাদ্য প্রতি বছর একই থাকে)।
    ২৭ ডিসেম্বরআন্তর্জাতিক মহামারি প্রস্তুতি দিবস (২০২০ সালে প্রথমবারের মতাে পালিত হয়)।

    সপ্তাহ

    • ১০-১৫ ডিসেম্বর : ভ্যাট সপ্তাহ ২০২১।
    • ১১-১৪ ডিসেম্বর : ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানাে হয়।
    • ১৯-২০ ডিসেম্বর : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB) দিবস।

    সম্মেলন-বৈঠক

    ইন্টারপােল সম্মেলন

    • আয়ােজন : ৮৯তম।
    • সময়কাল : ২৩-২৫ নভেম্বর ২০২১
    • স্থান : তুরস্ক।

    ফোবানা সম্মেলন

    • আয়ােজন : ৩৫তম।
    • আয়ােজক : ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসােসিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (FOBANA)
    • সময়কাল : ২৬-২৮ নভেম্বর ২০১১।
    • স্থান : গ্যালর্ড ন্যাশনাল রিসাের্ট অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার, মেরিল্যান্ড; যুক্তরাষ্ট্র।
    • ৩৬তম ROBANA সম্মেলন ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত হবে ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগােতে। আর ২০২৩ সালে ৩৭তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে টেক্সাস রাজ্যের ডালাসে।

    বিশ্ব শান্তি সম্মেলন

    • সময়কাল : ৪-৫ ডিসেম্বর ২০২১
    • স্থান : ঢাকা, বাংলাদেশ।
    • অংশগ্রহণকারী দেশ : ৫০টি
    • জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে বিশেষ আয়ােজন।

    ASEM শীর্ষ সম্মেলন

    • ASEM-Asia-Europe Meeting
    • আয়ােজন : ১৩তম
    • সময়কাল : ২৫-২৬ নভেম্বর ২০২১
    • স্থান : নমপেন, কম্বােডিয়া

    মেলা-উৎসব

    ওয়ার্ল্ডওয়াইড মিউজিক এক্সপাে

    • সময়কাল’: ২৭-৩১ অক্টোবর ২০২১
    • স্থান : পাের্তো, পর্তুগাল।
    • অংশগ্রহণকারী দেশ : ১০২টি।
    • বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ সংগীত সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতাে অংশ নেয় চিরকুট ব্যান্ডের শারমিন সুলতানা সুমি।

    সাহিত্য-সংস্কৃতি

    উপাখ্যান : বাংলাদেশের ইতিহাস। এবং রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্মের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা, জীবনবােধ ও রাজনীতির সমন্বয়ে রচিত গ্রন্থ। লেখক রাশেক রহমান। মােড়ক উন্মোচন ২ ডিসেম্বর ২০২১।

    বঙ্গবন্ধুর বিজ্ঞান ভাবনা ও বাংলাদেশ : বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (BCSIR) প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থ। মােড়ক উন্মোচন ১৩ ডিসেম্বর ২০২১। গ্রন্থে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের খ্যাতিমান ৫৯. বিজ্ঞানী, গবেষক, শিল্পী, কবি ও শিক্ষাবিদের প্রবন্ধ সন্নিবেশ করা হয়।

    নেতা মােদের শেখ মুজিব : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সম্পাদিত গবেষণাধর্মী গ্রন্থ। মােড়ক উন্মোচন ৭ ডিসেম্বর ২০১১। ৫১৬ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি পরিমার্জন ও সংশােধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

  • প্রাচীন বাংলার ইতিহাস

    ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৫৬,৯৭৭ বর্গমাইলের বর্তমান বাংলাদেশের জন্ম হয়। ১৯৪৭-১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান, ১৯৪৭’র পূর্বে ব্রিটিশ আমল বা তারও পূর্বে বর্তমান বাংলাদেশসহ আরও বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল বৃহত্তর বাংলা অঞ্চল। অর্থাৎআজকের বাংলাদেশ, অতীতে যা পূর্ব পাকিস্তান, পূর্ব বাংলা, বাংলা, বঙ্গ, গৌড় ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল তার একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে।

    প্রাচীন বাংলার সীমা

    • উত্তরে হিমালয় পর্বত, নেপাল, ভুটান ও সিকিম রাজ্য
    • দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর
    • পূর্বে জৈন্তা পাহাড়, ত্রিপুরাচট্টগ্রাম শৈলশ্রেণি
    • পশ্চিমে সাঁওতাল পরগনা, ছােট নাগপুর, কেওঞ্জর-ময়ূরভঞ্জের শৈলময় অরণ্যভূমি
    • উত্তরপূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের উপত্যকা
    • উত্তর-পশ্চিমে বিহারের দ্বারাভাঙ্গা পর্যন্ত ভাগীরথী নদীর উত্তরে সমান্তরাল এলাকা।

    ভৌগােলিক বৈশিষ্ট্য

    ভূ-প্রাকৃতিক গঠন বৈশিষ্ট্যের আলােকে বাংলাকে ৫টি ভাগে ভাগ করা যায়— উত্তর বাংলার পাললিক সমভূমি; ব্রহ্মপুত্রমেঘনা অন্তবর্তী ভূভাগ; ভাগীরথী—মেঘনা। অন্তর্বর্তী ব-দ্বীপ; চট্টগ্রামের অনুচ্চ পার্বত্য এলাকা এবং বর্ধমান অঞ্চলের অনুচ্চ পার্বত্য এলাকা। বাংলার ভূ-প্রকৃতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নদীর। বাংলার বিস্তীর্ণ ভূভাগ নদীবাহিত পলি দ্বারা গঠিত এবং পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব বাংলার কিছু অংশ ছাড়া বাংলার প্রায়। সবটাই ভূ-তত্ত্বের আলােকে নবসৃষ্ট।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    বাঙালি জাতির উৎপত্তি

    পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আদিম মানব সভ্যতার যেরূপ বিবর্তন ঘটেছিল, বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। বাংলার পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে প্রাচীন ও নব্যপ্রস্তর যুগের এবং তাম্র যুগের নিদর্শন। পাওয়া গেছে। এই সকল যুগে বাংলার পার্বত্য সীমান্ত অঞ্চলে মানুষ বসবাস করত এবং ক্রমে তারা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।

    আরো পড়ুন : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

    বৈদিক যুগে আর্যদের সঙ্গে বাংলাবাসীর কোনােরূপ সম্পর্ক ছিল না। বৈদিক গ্রন্থাদিতে বাংলার নরনারীকে অনার্য ও অসভ্য বলা হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণ হয় বাংলার আদিম অধিবাসীরা আর্যজাতির বংশােদ্ভূত নয়। আর্যদের আগমনের পূর্বে বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতি বসবাস করত; যথা কোল, শবর, পুলিন্দ, ডােম, চন্ডাল ইত্যাদি। এইসব জাতিকে ‘অস্ট্রিক’ মানবগােষ্ঠীর বংশধর বলে ধরা হয়।

    আনুমানিক ৫,০০০-৬,০০০ বছর পূর্বে ইন্দোচীন থেকে আসাম হয়ে এ অস্ট্রিক গােষ্ঠীর বঙ্গদেশে আগমন ঘটে। এরা দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। তাদের সুসংগঠিত সমাজকে কোম বলা হতাে। এরা চাষাবাদ, লােহা-তামা প্রভৃতির ব্যবহার জানত। প্রাচীন এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোনাে গােষ্ঠী ক্রমেই বৃহত্তর শংকর বাঙালি জাতিগােষ্ঠীর উদ্ভব ও বিস্তার ঘটায় বাংলাদেশ ভূখন্ডে। সুতরাং বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছিল অস্ট্রিক বা অনার্য গােষ্ঠী থেকে।

    প্রাচীন বাংলার জনপদ
    জনপদবর্তমান অঞ্চল
    গৌড়উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, আধুনিক মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমানের কিছু অংশ ও চাপাইনবাবগঞ্জ
    বঙ্গফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালীর নিম্ন জলাভূমি, বৃহত্তর বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা, কুষ্টিয়া, বৃহত্তর কুমিল্লা, নােয়াখালীর কিছু অংশ, যশাের ও নদীয়া
    পুন্ড্রবৃহত্তর বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ।
    হরিকেলচট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ত্রিপুরা ও সিলেট (শ্রীহট্ট)
    সমতটবৃহত্তর কুমিল্লা ও নােয়াখালী অঞ্চল
    বরেন্দ্রবগুড়া, পাবনা, রাজশাহী বিভাগের উত্তর পশ্চিমাংশ, রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অংশ ।
    তাম্রলিপ্তিবর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর (প্রাচীন যুগে মিথুনাপুর নামে পরিচিত) জেলা
    চন্দ্রদ্বীপবরিশাল
    উত্তর রাঢ়মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমাংশ, সমগ্র বীরভূম জেলা ও বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা
    দক্ষিণ রাঢ়বর্ধমানের দক্ষিণাংশ, হুগলির বহুলাংশ ও হাওড়া জেলা
    বাংলা বা বাঙলাখুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী
    দণ্ডভুক্তিপশ্চিমবঙ্গের (ভারত) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল
    বিক্রমপুরমুন্সিগঞ্জ জেলা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল
    সপ্তগাঁওখুলনা ও সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল
    কামরূপরংপুর, জলপাইগুড়ি ও আসামের কামরূপ জেলা।
    আরাকানকক্সবাজার, মিয়ানমারের কিছু অংশ ও কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণ অঞ্চল
    সূহ্মগঙ্গা-ভাগীরথীর পশ্চিম তীরের দক্ষিণ ভূ-ভাগ, আধুনিক মত অনুসারে, বর্ধমানের দক্ষিণাঞ্চল, হুগলির বৃহদাংশ, হাওড়া এবং বীরভূম জেলা

    অস্ট্রিক জাতি

    প্রাচীন বাঙালি জনগােষ্ঠীকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রাক আর্য বা অনার্য নরগােষ্ঠী এবং আর্য নরগােষ্ঠী। আর্যপূর্ব জনগােষ্ঠী মূলত চার ভাগে বিভক্ত— নেগ্রিটো, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভােটচীনীয়। অস্ট্রিক গােষ্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে বলে মনে করা হয়। অস্ট্রিক জাতিকে নিষাদ জাতিগােষ্ঠী নামেও অভিহিত করা হয়।

    প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বছর পূর্বে অস্ট্রিক জাতি ইন্দোচীন থেকে বাংলায় প্রবেশ করে এবং নেগ্রিটোদের পরাজিত করে। সমসাময়িক সময়ে বা কিছুদিন পরে দ্রাবিড় জাতি খাইবার গিরিপথ দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করে এবং তারা অস্ট্রিক জাতির ওপর। কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।

    আরো পড়ুন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় গ্রন্থ কারাগারের রােজনামচা

    অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জাতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় আর্যপূর্ব জনগােষ্ঠী। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে বঙ্গ ভূখণ্ডে আর্যগণ আগমন করে। বাংলার আদি অধিবাসীদের ভাষা ছিল অস্ট্রিক। আর্যদের আগমনের ফলে। ধীরে ধীরে অস্ট্রিক ভাষা হারিয়ে যেতে থাকে এবং বিবর্তনের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়। কাজেই বলা যায় বাঙালি জাতি যেমন সংকর তেমনি বাংলা ভাষাও সংকর।

    বাংলা শব্দের উৎপত্তি

    ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনামলে বাংলা’ শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। সম্রাট আকবরের আমলে সমগ্র ‘বাংলা’ তথা ‘বঙ্গ’ দেশ ‘সুবাহ-ই-বাঙ্গালাহ’ নামে পরিচিত ছিল। ফারসি ‘বাঙ্গালাহ’ শব্দ থেকে পর্তুগিজ Bangle এর ইংরেজি Bengal শব্দ থেকে এর উৎপত্তি। বাংলা বা বাঙালি নামের উৎপত্তি নিয়ে একাধিক তথ্য পাওয়া যায়।

    মােগল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল তার ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে দেশবাচক ‘বাংলা’ শব্দ ব্যবহার করে এর উৎপত্তি সম্পর্কে। দেখিয়েছেন যে, এ দেশের প্রাচীন নাম ‘বঙ্গ’ এর। সাথে বাঁধ বা জমির সীমানা নির্ধারক আল (আল বা আইল) প্রত্যয়যােগে ‘বাংলা’ শব্দ গঠিত হয়েছে।

    প্রাচীন কালে বঙ্গের রাজারা ১০ গজ উঁচু এবং ২০ গজ বিস্তৃত প্রকাণ্ড আল নির্মাণ করতেন তাই এর নাম বঙ্গের সাথে আল যােগ করে হয়েছে বাঙ্গালা। শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলার নামকরণ করেন ‘মূলক-ই-বাঙ্গালাহ’। ‘বাঙ্গালাহ’ থেকে বাংলা এবং ‘মূলক’ অর্থ দেশ। সুতরাং ‘মূক-ই-বাঙ্গালাহ’ থেকে বাংলাদেশ।

    আর্য জাতির তথ্য

    • আর্যদের প্রাচীন নিবাস ইউরাল পর্বতের দক্ষিণে।
    • আর্যদের আগমন খ্রিষ্টপূর্ব। ১৫০০-১৪০০ অব্দে (আনুমানিক)।
    • আর্যদের ধর্ম সনাতন হিন্দু ধর্ম।
    • ধর্মগ্রন্থ বেদ; বেদের অংশ ৪টি (ঋক, সাম, যজু, অথর্ব)।
    • আৰ্যযুগকে বলা হয়—বৈদিক যুগ।
    • ঋগ্বেদের যুগে পূর্ব আফগানিস্তান, পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশের কতক অঞ্চলকে আশ্রয় করে আর্য জনপদ ও সভ্যতা গড়ে ওঠে। এই অঞ্চলকে ‘সপ্তসিন্ধু’ বলা হয়ে থাকে।
    • আর্যসাহিত্যকে বলা হয়— বৈদিক সাহিত্য।

    প্রাচীন বাংলার ধর্ম

    আর্যপূর্ব বাংলার লােকালয়ের বাইরে গ্রাম-দেবতার অবস্থিতি ছিল, নানা ধরনের ধ্বজা-পূজা ছিল। এ সবই কোম সমাজের পূজা। এ ছাড়া চাষাবাদের সঙ্গেও নানা ধরনের দেবদেবীর ; পূজা জড়িত ছিল। রথযাত্রা, ন্যাত্রা, দোলযাত্রা ইত্যাদি আদি যুগেরই অবদান।

    প্রাক-বৈদিক যুগে কোমদের অন্যতম ধর্মোৎসব ছিল ব্রত। শিবপূজা মধুসংক্রান্তি, পৃথিপূজা ইত্যাদি; উল্লেখযােগ্য ব্রত। কোমদের দেবতা ছিলেন ধর্মঠাকুর। রাঢ়দেশেই ধর্মপূজার প্রচলন ছিল। বাংলার কৃষিজ সমাজে ভালাে ফসলের আশায় হােলি উৎসব পালন করা হতাে।

    এছাড়া মনসা পূজা, জাঙ্গুলী দেবীর পূজা, পর্ণশবরী শারববাসব, ঘটলক্ষ্মী, ষষ্ঠীপূজা ইত্যাদি আর্যপূর্ব কোম সমাজের অবদান। তবে প্রাক-গুপ্ত যুগে জৈন ধর্ম, আজীবিক ই ও বৌদ্ধধর্মের বিস্তার ঘটে বাংলার সমাজে। ষষ্ঠ শতকেব্রাহ্ম বংশের প্রভাবাধীন বৈদিক ধর্মের বিস্তর প্রসার ঘটেছিল বাংলাদেশে। পাল যুগে বৌদ্ধ এবং সেন যুগে ব্রাহ্মণ ধর্মের জয়জয়কার অবস্থা বিরাজ করেছিল। এছাড়া পৌরাণিক ধর্ম, বৈষ্ণবধর্ম, শৈব ধর্ম (হিন্দু ধর্মের বিশেষ শাখা), সহজিয়া ধর্মের প্রভাবও কমবেশি বাংলায় ঘটেছিল।

    প্রাচীন বাংলার শিক্ষা-জ্ঞানবিজ্ঞান

    প্রাচীন বাংলার শিক্ষাদীক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞান সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বেদ-ব্রাহ্মণ-উপনিষদ, ধর্মশাস্ত্র, ধর্মসূত্র, প্রাচীগ্রন্থ ইত্যাদিতে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তাতে প্রাচীন বাংলার কথা তেমন উল্লেখ নেই। তারপরও সুদূর প্রাচীনকালে এ দেশে গৃহবদ্ধ, পরিবারবদ্ধ ও সমাজবদ্ধ। মানুষের মধ্যে শিক্ষাদীক্ষার একটা সংস্কার ছিল। কিন্তু তাতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ছিল না। শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চায় আমাদের।

    আরো পড়ুন : সেপ্টেম্বর মাসের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ

    প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যায় মৌর্য আমল (খ্রি. পূ. তৃতীয় শতক) থেকে। তবে বৌদ্ধ সংঘরাম এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মকেন্দ্রগুলােই প্রথম ছােট বড় শিক্ষায়তন। হিসেবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নালন্দার। মহাবিহারের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ-৭ম শতকীয় জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিক্ষাদীক্ষার সঙ্গে বাংলার ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ গড়ে উঠে।

    পালযুগে বাংলায় জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়; ঐ সময় চতুস্পাঠী শিক্ষা গড়ে তােলা হয়। বিদ্যার্থীরা বাংলার বাইরেও লেখাপড়া করতে যেতেন। গ্রন্থরচনা, চিকিৎসাশাস্ত্র, ব্যাকরণ ও অভিধান চর্চা, ধর্মচর্চা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রাচীন বাংলায় আমাদের কিছুটা সাফল্য ছিল।

    গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি

    • বাংলার আদি অধিবাসীগণ ছিলেন অস্ট্রিক ভাষাভাষী। [৪২তম বিসিএস]
    • বাঙালি জাতির প্রধান অংশ অস্ট্রিক জাতিগােষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। [৩৬ ও ২৮তম বিসিএস]
    • বাংলার সর্বপ্রাচীন জনপদের নাম পুণ্ডু। [৩৬তম বিসিএস]
    • বরেন্দ্র বলতে বােঝায় উত্তরবঙ্গ। [১৪তম প্রভাষক নিবন্ধন ]
    • তাম্রলিপি হলাে একটি প্রাচীন জনপদ। [পল্লী বিদ্যুতায়ন বাের্ড ২০১৭] ।
    • সর্বপ্রথম ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ ছিল ঐতরেয়-আরণ্যক’ গ্রন্থে। [১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন ]
    • ইতিহাসের জনক প্রাচীন গ্রিসের হেরােডােটাস।
    • প্রাগৈতিহাসিক যুগ হলাে পাথরের যুগ। পাথরের পরবর্তী যুগ ধাতুর যুগ।
    • বিশ্ব সভ্যতার যাত্রা শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে
  • মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কিছু প্রশ্নোত্তর জেনে রাখুন

    প্রতি বছর বিভিন্ন চাকীর পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশ কছু প্রশ্ন থাকেই। আপনাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কমন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর  নিচে দেওয়া হল-

    প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাব প্রাপ্ত একমাত্র বিদেশী কে?
    উঃ হোসাইল হেমার ওয়াডার ওয়াডারল্যান্ড,অষ্ট্রেলিয়া

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    প্রশ্ন: বাংলাদেশে সর্বকনিষ্ঠ খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা কে?
    উঃ শহীদুল ইসলাম(লালু) বীরপ্রতীক।

    প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী গঠন করা হয় কবে?
    উঃ ২১ নভেম্বর, ১৯৭১।

    প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী কবে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে?
    উঃ ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১।

    প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের সেনাধ্যক্ষ কে ছিলেন?
    উঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।

    প্রশ্ন: পাকিস্তানের পক্ষে কে আত্মসমর্পন করেন?
    উঃ জেনারেল এ, কে নিয়াজী।

    প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের আত্মসমর্পণ দলিল কোথায় স্বাক্ষরিত হয়?
    উঃ রেসকোর্স ময়দানে।

    প্রশ্ন: জেনারেল এ, কে নিয়াজী কার নিকট আত্মসমর্পণ করে?
    উঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার।

    প্রশ্ন: আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে কে নেতৃত্ব প্রদান করেন?
    উঃ বিমান বাহিনীর প্রধান কমোডর এ কে খন্দকার।

    প্রশ্ন: জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পের সময় পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীর কত সংখ্যা ছিল ?
    উঃ ৯৩ হাজার।

    প্রশ্ন: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরমপত্র নামক কথিকা কে পাঠ করতেন?
    উঃ এম আর আখতার মুকুল।

    প্রশ্ন: চরমপত্র কথিকা প্রচারিত কোথায় থেকে প্রচারিত হত?
    উ: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে

    প্রশ্ন: ২৬ মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা করা হয় কখন?
    উঃ ১৯৮০ সালে।

    প্রশ্ন: বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে প্রথম মৃত্য বরণ করেন কে?
    উঃ মোস্তফা কামাল (৮ এপ্রিল, ১৯৭১)।

    প্রশ্ন: বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে সর্বশেষে মৃত্য বরণ কে করেন?
    উঃ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (১৪ ডিসেম্বর,১৯৭১)।

    প্রশ্ন: একমাত্র বীর বিক্রম খেতাবধারী আদিবাসী/উপজাতী মুক্তিযোদ্ধা কে ছিলেন?
    উঃ উক্যাচিং মারমা।

    প্রশ্ন: কোন সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য “বীরপ্রতীক” খেতাব লাভ করেন?
    উ: আবদুস সাত্তার।

    প্রশ্ন: কোন ফরাসী সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন?
    উ: আঁদ্রে মায়ারা।

    প্রশ্ন:মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা কোনটি?
    উ: যশোর।

    প্রশ্ন: বাংলাদেশে সর্ব কনিষ্ঠ খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কে?
    উ: শহীদুল ইসলাম চৌধুরী।

    প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শহীদুল ইসলামের বয়স কত ছিল?
    উ: ১২ বছর।

  • বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে প্রশ্ন ও উত্তর

    ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে যে সকল প্রতিষ্ঠান কিংবা সিদ্ধান্তসমূহের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয়, তাদের উল্লেখযােগ্য বিষয় নিয়ে আমাদের এ আয়ােজন।

    জাতীয় পতাকা

    প্রশ্ন : বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রূপকার কে?
    উত্তর : চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    প্রশ্ন : জাতীয় পতাকার নকশা প্রথম কে তৈরি করেন?
    উত্তর : শিবনারায়ণ দাস (৬ জুন ১৯৭০)।

    প্রশ্ন : জাতীয় পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দেওয়া সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয় কবে?
    উত্তর : ৪ জানুয়ারি ১৯৭২।

    প্রশ্ন : বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় পতাকা কবে গৃহীত হয়?
    উত্তর : ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২।

    প্রশ্ন : সংবিধানের ৪(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রং কী?
    উত্তর : সবুজ রঙের জমিনের ওপর স্থাপিত রক্তবর্ণের একটি ভরাট বৃত্ত।

    প্রশ্ন : জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত কত?
    উওর : ১০ঃ৬ (৫ঃ৩)।

    জাতীয় সঙ্গীত গৃহীত

    প্রশ্ন : জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা ও সুরকার কে?
    উওর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

    প্রশ্ন : জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম ইংরেজি অনুবাদক কে?
    উত্তর : সৈয়দ আলী আহসান।

    প্রশ্ন : জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম দুই লাইন কী?
    উত্তর : আমার সােনার বাংলা, আমি তােমায় ভালােবাসি। চিরদিন তােমার আকাশ, তােমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।

    প্রশ্ন : ‘আমার সােনার বাংলা কবিতার কতটুকু বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়?
    উত্তর : প্রথম ১০টি চরণ।

    প্রশ্ন : ‘আমার সােনার বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘােষণা করা হয় কবে?
    উত্তর : ৩ মার্চ ১৯৭১ (গৃহীত হয় ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২)।

    প্রশ্ন : ২০০৬ সালে বিবিসির শ্রোতা জরিপে শ্রেষ্ঠ বাংলা গান নির্বাচিত হয় কোনটি?
    উত্তর : ‘আমার সােনার বাংলা…’।

    রণসঙ্গীত গৃহীত

    প্রশ্ন : বাংলাদেশের রণসঙ্গীতের প্রথম দুই লাইন কী?
    উত্তর : চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল।

    প্রশ্ন : বাংলাদেশের রণসঙ্গীতের রচয়িতা ও সুরকার কে?
    উত্তর : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

    প্রশ্ন : ‘চল চল চল/উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে কবে গৃহীত হয়?
    উত্তর : ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২।

    বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড

    প্রশ্ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বর্তমান নাম কী?
    উত্তর : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড।

    প্রশ্ন : কোন মন্ত্রণালয়ের অধীন?
    উত্তর : বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

    প্রশ্ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠিত হয় কবে?
    উত্তর : ৪ জানুয়ারি ১৯৭২।

    প্রশ্ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কবে কোম্পানিকরণ করা হয়?
    উত্তর : ২৩ জুলাই ২০০৭।

    প্রশ্ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রতীক কী?
    উত্তর : উদীয়মান সূর্যের মধ্যে উড়ন্ত বলাকা।

    প্রশ্ন : দেশে প্রথম অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু হয় কবে?
    উত্তর : ৭ মার্চ ১৯৭২ (চট্টগ্রাম ও সিলেট)।

    প্রশ্ন : দেশে দ্বিতীয় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু হয় কবে?
    উত্তর : ৯ মার্চ ১৯৭২ (যশাের)।

    প্রশ্ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের প্রতীক ‘বলাকা’র ডিজাইনার কে?
    উত্তর : শিল্পী কামরুল হাসান।

    প্রশ্ন :বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হয় কবে?
    উত্তর : ৪ মার্চ ১৯৭২ (ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা) ১৭৯ জন যাত্রী নিয়ে।

    প্রশ্ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্লোগান কী?
    উত্তর : আকাশে শান্তির নীড় (Your home in the sky)।

    প্রশ্ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
    উত্তর : বলাকা ভবন, কুর্মিটোলা, ঢাকা।

    প্রশ্ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা কতটি?
    উত্তর :২১টি।

    ট্রেডিং কর্পোরেশনঅব বাংলাদেশ (TCB)

    প্রশ্ন : ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (TCB) কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
    উত্তর : ১ জানুয়ারি ১৯৭২।

    প্রশ্ন : TCB’র পূর্ণরূপ কী?
    উত্তর : Trading Corporation of Bangladeshi

    প্রশ্ন : TCB গঠনের উদ্দেশ্য কী?
    উত্তর : ১. সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য আপকালীন মজুদ গড়ে তােলা; ২. প্রয়ােজন অনুসারে ভােক্তাদের মাঝে সাশ্রয়ী মূল্যে কতিপয় নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা।

    প্রশ্ন : TCB কোন মন্ত্রণালয়ের অধীন ?
    উত্তর : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

    প্রশ্ন : TCB সর্বপ্রথম কবে তৈরি পােশাক রপ্তানি আরম্ভ করে?
    উত্তর : ১৯৭৫ সালে।

    বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা

    প্রশ্ন : বাংলাদেশের জাতীয় বার্তা সংস্থার নাম কী?
    উত্তর : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।

    প্রশ্ন : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (BSS) প্রতিষ্ঠিত হয় কবে?
    উত্তর : ১ জানুয়ারি ১৯৭২।

    প্রশ্ন : BSS’র পূর্ণরূপ কী?
    উত্তর : BangladeshSangbad Sangstha

    প্রশ্ন : সদর দপ্তর কোথায়?
    উত্তর : ঢাকা।

    প্রশ্ন : ব্যুরাে/অফিস কোথায়?
    উত্তর : চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, খুলনা, বরিশাল, রাঙামাটি ও সিলেট।

    প্রশ্ন : বাংলা সংবাদ পরিষেবা চালু করে কবে?
    উত্তর : ১৯৯৯ সালে।

  • আওয়ামী লীগের ৬-দফা কর্মসূচি (১৯৬৬)

    ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের লাহােরে সকল বিরােধী দলের এক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ কনভেনশনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ৬-দফা কর্মসূচি উত্থাপন করেন। ৬-দফা কর্মসূচি সংক্ষেপে নিম্নরূপ:

    দফা-১ : লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্র। সার্বজনীন ভােটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত আইন পরিষদের প্রাধান্যসহ সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    দফা-২ : বৈদেশিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা ছাড়া সকল বিষয় অঙ্গরাষ্ট্র বা প্রদেশের হাতে ন্যস্ত থাকবে। উল্লেখিত দুটি বিষয় ন্যস্ত থাকবে কেন্দ্রীয় বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে।

    দফা-৩ : পাকিস্তানের দুটি অঞ্চলের জন্য পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যােগ্য মুদ্রাব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। অথবা সমগ্র দেশে একটি মুদ্রা ব্যবস্থা থাকবে, তবে সেক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার রােধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য একটি ফেডারেল ব্যাংকের অধীনে কার্যকরী ব্যবস্থা থাকতে হবে।

    দফা-৪ : অঙ্গরাষ্ট্র বা প্রদেশগুলাের কর বা শুল্ক ধার্য করার ক্ষমতা থাকবে। তবে ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এর একটি অংশ পাবে।

    দফা-৫ : পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পৃথক হিসাব রাখা হবে। অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা স্ব স্ব অঞ্চলের বা অঙ্গরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আঞ্চলিক সরকার বিদেশে বাণিজ্য প্রতিনিধি প্রেরণ এবং যে কোন চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।

    দফা-৬ : নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অঙ্গরাষ্ট্রগুলাে প্যারা মিলিশিয়া বা আধা সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে
    পারবে এবং নৌ সদর দফতর পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামে স্থাপন করতে হবে।

    বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা আন্দোলন

    লাহােরে অনুষ্ঠিত বিরােধী দলের কনভেনশনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ৬-দফা কর্মসূচি উত্থাপন করেন কিন্তু উক্ত কনভেনশনে তা গৃহীত হয়নি। এধরনের একটি পরিস্থিতির মুখােমুখি যে বঙ্গবন্ধুকে হতে হবে তা তিনি পূর্বেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি মূখ্যত পাকিস্তানি শাসনশােষণ ও বঞ্চনার মূলে কুঠারাঘাত হানে। লাহাের কনভেনশনে উত্থাপিত ৬-দফা কর্মসূচিকে বঙ্গবন্ধু আমাদের (বাঙালির) বাচার দাবী হিসেবে আখ্যায়িত করে তা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কাছে হাজির হন। এরই মাঝে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল (মার্চ, ১৯৬৬) ডেকে বঙ্গবন্ধু ৬-দফা কর্মসূচি অনুমােদন করিয়ে নেন। উক্ত কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

    ১৯৬৬ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি (লাহাের কনভেনশনের অব্যবহিত পরে) থেকে ৬-দফা কর্মসূচির অনুকূলে গণসমর্থন আদায়ের জন্যে কর্মতৎপরতা শুরু হয়। তিন মাসব্যাপী একটানা গণসংযােগ অভিযান চলে। পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধুকে বার বার গ্রেফতার করা হয়; কখনাে সিলেটে, কখনাে ময়মনসিংহে, কখনাে ঢাকায় আবার কখনাে বা নারায়ণগঞ্জে।

    ১৯৬৬ সালে ৬-দফা আন্দোলনে প্রথম তিন মাসেই বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন। একই বছরের ৭ জুন ৬দফার প্রতি সমর্থন এবং বঙ্গবন্ধুসহ গ্রেফতারকৃত অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগের ডাকে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট পালনকালীন সময়ে পুলিশের গুলিতে ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে ১৩ ব্যক্তি নিহত হয়। এভাবে পশ্চিম পাকিস্তানী আইয়ুব সরকারের জেল-জুলুম হত্যা-নির্যাতন ৬-দফা আন্দোলনে বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটায়। সভা সমাবেশ, ধর্মঘট, পােস্টার, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে ৬-দফা কর্মসূচি বাংলার জনগণের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের বাঁচার দাবিতে পরিণত হয়।

    ৬-দফা কর্মসূচি ও বাঙালি মধ্যবিত্ত

    ৬-দফা দাবি তকালীন সামগ্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রণীত হয়েছিল। আর তা ছিল, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক ধাঁচের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে বাঙালির জাতীয় মুক্তি অর্জন। অন্যকথায়, ৬-দফা কর্মসূচির লক্ষ ছিল ধর্মবর্ণ-শ্রেণী নির্বিশেষে বাঙালি জনগণকে জাতীয় মুক্তির চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায়: “৬-দফা বাংলার শ্রমিক-কৃষক মুজুর-মধ্যবিত্ত তথা আপামর মানুষের মুক্তির সনদ, ৬-দফা শােষকের হাত থেকে শােষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার, ৬-দফা মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টানবৌদ্ধদের নিয়ে গঠিত বাঙালি জাতির স্বকীয় মহিমায় আত্মপ্রকাশ আর আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি …. ৬দফার সংগ্রাম আমাদের জীবন মরণের সংগ্রাম।”

    ৬-দফা কর্মসূচি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ

    পাকিস্তানের শাসন আমলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মধ্যে যে স্বাধিকার বােধ জন্ম নেয়, সেই পটভূমিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লাহাের কনভেনশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ৬-দফা দাবি উত্থাপন করেন। আইয়ুব সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কঠোর। জেনারেল আইয়ুব ৬-দফাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী’, ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী’, ‘ধ্বংসাত্মক’, ‘বৃহত্তর বাংলা প্রতিষ্ঠা’-র কর্মসূচি বলে আখ্যায়িত করেন এবং এ কর্মসূচির প্রবক্তা বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের এক নম্বর দুশমন’ হিসেবে চিহ্নিত করে ৬-দফা পন্থীদের মনে অস্ত্রের ভাষা প্রয়ােগের হুমকি দেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং এর কর্ণধার বঙ্গবন্ধু আইয়ুব সরকারের হুমকিতে দমে যাবার পাত্র ছিলেন না। এ কর্মসূচি সমগ্র বাঙালির চেতনামূলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা হয় নি বটে তবে ৬-দফা বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে তােলে। যে কারণে এটি সম্ভব হয়েছে তা হলাে এর ভেতরে বাঙালির জাতীয় মুক্তির বীজ নিহিত ছিল। এক কথায় বলা যায়, ৬-দফা ছিল বাঙালির জাতীয় মুক্তির সনদ। ৬-দফা কেন্দ্রিক আন্দোলনের পথ ধরেই জন্ম নিয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

    সারকথা

    ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের লাহােরে অনুষ্ঠিত বিরােধী দলের কনভেনশনে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬-দফা কর্মসূচি ঘােষণা করেন। পাকিস্তানকে একটি ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত করা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা ছাড়া বাকি সকল ক্ষমতা প্রদেশের হাতে ন্যস্ত, পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের জন্য পৃথক মুদ্রাব্যবস্থা প্রবর্তন, অঙ্গরাষ্ট্রের কর বা শুল্ক ধার্য করার ক্ষমতা, বিদেশের সঙ্গে আঞ্চলিক সরকারের বাণিজ্য চুক্তি করার ক্ষমতা এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আধা সামরিক বাহিনী গড়ে তােলা ছিল ৬-দফা কর্মসূচির মূল বক্তব্য। এ কর্মসূচি ঘােষণার পর আওয়ামী লীগের উপর চরম দমন পীড়ন-নির্যাতন নেমে আসে। বঙ্গবন্ধুকে বার পর গ্রেপ্তার বরণ করতে হয়। ৬-দফা ছিল বাঙালিদের জাতীয় মুক্তির সনদ। তাই, আইয়ুব সরকারের নির্যাতন সত্যেও একে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতিসত্তার উত্থান ঘটে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ৬-দফা কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম

  • ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান

    পাকিস্তানি শাসন-শােষণ, নির্যাতন ও নিষ্পেষণ পূর্ব বাংলার জনগণের উপর যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে, ৬-দফা কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন তত দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এ আন্দোলন দমনে আইয়ুব সরকারের ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র (১৯৬৮) আশ্রয় গ্রহণ এক বিস্ফোরণমুখ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়। এ মামলায় বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামী করা হয়। ঠিক এ সময়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন ও মতিয়া উভয় গ্রুপ), সরকারি ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের ‘দোলন গ্রুপ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ুব বিরােধী মঞ্চ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনপূর্বক ৬-দফা কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থনসহ ১১-দফা কর্মসূচি ঘােষণা করে, যা আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করে।

    কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন আরম্ভ করে। বস্তুত ১৯৬৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত, এ পাঁচ মাস সমগ্র পূর্ব বাংলায় গণবিদ্রোহ দেখা দেয়। একই সময় পশ্চিম পাকিস্তানেও আইয়ুব বিরােধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হওয়ার পর ১৯৬৯ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ (৬-দফা পন্থী), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), নেজাম-ই-ইসলাম পাটি, জমিয়ত-উল-উলামা-ই-ইসলাম, নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (মমতাজ দৌলতানা), ন্যাশনাল ডেমােক্রেটিক ফ্রন্ট, জামায়াত-ই-ইসলামি, পাকিস্তান আওয়ামী লীগ (নওয়াবজাদা নসরুলাহ খান) -এ ৮টি রাজনৈতিক দল ৮-দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ডেমােক্রেটিক এ্যাকশন কমিটি (DAC-ডাক) গঠন করে। ৮-দফা দাবিনামার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠা, প্রাপ্ত বয়স্কদের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, অবিলম্বে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    ক্ষমতাসীন আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে এতদিন আন্দোলনে মূলত ছাত্র সমাজের প্রাধ্যন্য ছিল। কিন্তু ১৯৬৯ এর মাঝামাঝিতে অন্যান্য গােষ্ঠী বিশেষতঃ কৃষক, শিল্প শ্রমিক, রাজনৈতিক কর্মী সকলে আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। ফলে আইয়ুব বিরােধী গণ-আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানের রূপ পরিগ্রহ করে।

    ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের কারণ

    গণতন্ত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন, পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব বিলােপ, পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের মধ্যকার বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, যাবতীয় গণবিরােধী শক্তির মূলােৎপাটন এবং সর্বোপরি স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৬৯ সালে যে গণ-অভ্যুত্থানের সূচিত হয় তার প্রধান কারণগুলাে ছিল নিম্নরূপ:

    • ১৯৫৮ সালের ঘােষিত সামরিক শাসনের ফলে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়। পূর্ব বাংলার জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পর্যদুস্ত হয় পাকিস্তানি সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অগণতান্ত্রিক আচরণে। অবরুদ্ধ জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে, সূচিত হয় গণ-অভ্যুত্থান।
    • পূর্ব বাংলার বাঙালিদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়ার প্রতি পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর চরম ঔদাসীন্য ও বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গী বাঙালিদের প্রান্তিকীকরণ করে। ফলে সৃষ্টি হয় গণ-অভ্যুত্থানের।
    • পাকিস্তানে গণবিরােধী ও অশুভশক্তির বিশেষত মৌলিক গণতন্ত্রীদের ক্রমাগত ক্ষমতাবৃদ্ধি ও ক্ষমতার অপব্যবহার ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের সুযােগ বন্ধ ইত্যাদি গণঅভ্যুত্থানকে ত্বরান্বিত করে।
    • পাকিস্তান রাষ্ট্রে পূর্ব বাংলার বাঙালিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বকীয়তা বজায় রাখা দুরূহ হয়ে পড়ে, যা কার্যত উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মুখ্য কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
    • বাঙালিদের স্বার্থের আপােসহীন প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অপর ৩৪ জনের বিরুদ্ধে আইয়ুব সরকারের ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের এবং বিশেষ ট্রাইবুনালে তাদের বিচার অনুষ্ঠান ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানকে অনিবার্য করে তােলে।

    গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্ব

    আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রাত্যহিক কার্যবিবরণী যতই বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হতে থাকে, বাঙালিরা ততই বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। পূর্ব বাংলার আপামর জনতা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন, কার্ফ ভঙ্গ, পুলিশ-ই.পি.আর-সেনাবাহিনী উপেক্ষা করে রাস্তায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

    চতুর্দিক প্রকম্পিত করে ধ্বনিত হতে থাকে গগনবিদারী শ্লোগান: ‘জেলের তালা ভাঙ্গবাে, শেখ মুজিবকে আনবাে’, ‘তােমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’, ‘তােমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ইত্যাদি। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান (আসাদ)-এর মৃত্যু, ২৪ জানুয়ারি পুলিশের বুলেটে নবকুমার ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণীর ছাত্র মতিউরের মৃত্যু, ১৫ ফেব্রুয়ারি বন্দী অবস্থায় ঢাকার সেনানিবাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হকের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া, ১৮ ফেব্রুয়ারি ই.পি.আর-এর গুলিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহার শাহাদত বরণ ইত্যাদি মর্মান্তিক ঘটনা সমগ্র পূর্ব বাংলায় প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয়। আইয়ুব শাসন বিরােধী উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান পায় চূড়ান্তরূপ।

    শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান

    আইয়ুব বিরােধী গণঅভ্যুত্থান যখন চূড়ান্ত পর্বে উপনীত, তখন দিশেহারা হয়ে জেনারেল আইয়ুব প্রথমে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারােল (Parole)-এ মুক্তিদানে তার সম্মতির কথা ঘােষণা করেন। কিন্তু শেখ মুজিব তাতে রাজী হননি।

    অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি জেনারেল আইয়ুব তাকে (শেখ মুজিবুর রহমানকে) নিঃশর্ত মুক্তিদানে ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য হন। পরের দিন অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখাে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে এক ঐতিহাসিক গণসম্বর্ধনা দেওয়া হয়।

    এ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর সহ-সভাপতি তােফায়েল আহমদ কর্তৃক কারামুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। অতঃপর ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ জেনারেল আইয়ুব ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন।

    সারকথা

    ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬-দফা কর্মসূচি ঘােষণা করলে বাঙালিদের মধ্যে দ্রুত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এর মােকাবেলা করতে আইয়ুব সরকার ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযােগ ছিল ভারতের সহযােগিতায় সশস্ত্র পন্থায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করা। এ মামলার উদ্দেশ্য ছিল ৬-দফা ভিত্তিক বাঙালিদের স্বাধিকার আন্দোলন নস্যাৎ করা। আইয়ুব সরকারের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাঙালিরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ ১১-দফা কর্মসূচি দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে আইয়ুব – বিরােধী আন্দোলনের অগ্রভাগে এসে দাঁড়ায়।

  • অসহযােগ আন্দোলন এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ

    ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হলে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা হারাবার ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ অধিক আসনে জয়লাভ করবে এ ধারণা কমবেশি সবাই পােষণ করেছিল কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জনগণের ম্যান্ডেট পাবে পশ্চিমা শাসকেরা তা ভাবতে পারে নি। তাহলে হয়তাে তারা ভিন্ন কূটকৌশলের আশ্রয় নিত।

    আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালির রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব অর্জন এবং ৬-দফা ভিত্তিক সংবিধান প্রণয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়, যার কোনটিই পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক আমলা শাসকগােষ্ঠীর নিকট গ্রহণযােগ্য ছিল না। ফলে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের অব্যবহিত পরে শুরু হয় নতুন প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। সামরিক-বেসামরিক আমলা শাসকগােষ্ঠীর সঙ্গে এ প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে সহায়তা প্রদান করে পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিশেষত পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেছিলেন। নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি পাকিস্তানের ‘ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু এ সবই ছিল বাইরে থেকে লােক দেখানাে। ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র চালানাে হচ্ছিল কিভাবে নির্বাচনের রায় বানচাল করা যায়। অন্যদিকে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দলীয় নব নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের এক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

    উক্ত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সদস্যবৃন্দ ঐতিহাসিক ৬-দফা এবং ছাত্রসমাজের প্রাণের দাবি ১১-দফার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন না করে পাকিস্তানের সংবিধান রচনার শপথ গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যখন পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যথার্থঅর্থে আশার সঞ্চার করছিল তখন জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানে ‘দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল’ (আওয়ামী লীগ ও পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি) এ তত্ত্ব হাজির করেন। সংবিধানের প্রশ্নে দুটি দলের মধ্যে একটি সমঝােতা না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যােগদান না করার কথা তিনি ঘােষণা করেন।

    এ ঘােষণার পেছনে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তার যােগসাজসের বিষয়টি স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছিল। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার দু’দিন পূর্বে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘােষণা করেন। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতকরণের খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা রাজপথে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালির জাতীয় উত্থানে এক নব অধ্যায় সূচিত হয়।

    অসহযােগ আন্দোলন ও বাঙালির জাতীয় উত্থান

    প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অর্নিদিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘােষণার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সমগ্র পূর্ব বাংলায় হরতালের ডাক দেন। কার্যত ১ মার্চ থেকে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে অসহযােগ আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। ২ মার্চ রাতে কাফু জারি করা হয়। ছাত্রজনতা কাফু ভঙ্গ করে। সেনাবাহিনী গুলি চালায়। আন্দোলনের প্রতিটি দিনে শতশত লােক হতাহত হয়। প্রতিবাদে প্রতিরােধে জেগে ওঠে বাংলাদেশ। উত্থান ঘটে একটি জাতির। বাঙালি জাতির চারদিকে বিদ্রোহ দেখা দেয় বিদ্রোহের শ্লোগান ছিল : ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।

    ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র-জনতার সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ছাত্র সমাজের ‘স্বাধীন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ’, স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন’ ২৩ মার্চ পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে পূর্ব বাংলার সর্বত্র পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

    ১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সারা বাংলায় সর্বাত্মক অসহযােগ পালিত হয়। পূর্ব বাংলার সকল সরকারি, বেসরকারি অফিস, সেক্রেটারিয়েট, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, হাইকোট, পুলিশ প্রশাসন, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন পাকিস্তানি সরকারের নির্দেশ অমান্য ও অগ্রাহ্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলে। পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি প্রশাসন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন কার্যত সরকার প্রধান। বঙ্গবন্ধুর আবাসস্থল ধানমন্ডীর ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি পরিণত হয় সকল নির্দেশের উৎসস্থান অর্থাৎ সরকার প্রধানের কার্যালয় ।

    ৭ মার্চের ভাষণ ও এর প্রেক্ষাপট

    ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালিদের জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। এ দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) লক্ষ লক্ষ জনতার স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ইতিহাস খ্যাত এ ভাষণই ৭ মার্চের ভাষণ। ২ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর আহবানে সারা পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযােগ চলছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য এ ছিলাে অন্তিম মুহূর্ত। অন্যদিকে স্বাধীনতার চেতনায় প্রদীপ্ত বাঙালি জাতির জন্য এ ভাষণ ছিল পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শােষণের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতীয় মুক্তি বা কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত সংগ্রামের সূচনা। মাত্র ১৮ মিনিটের এক ভাষণ।

    বঙ্গবন্ধু তার সংক্ষিপ্ত অথচ তেজস্বী ভাষণে পাকিস্তানের ২৪ বছরের রাজনীতি ও বাঙালিদের বঞ্চনা করার ইতিহাস ব্যাখ্যা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে বাঙালিদের দ্বন্দ্বের স্বরূপ উপস্থাপন, অসহযােগ আন্দোলনের পটভূমি বিশ্লেষণ ও বিস্তারিত কর্মসূচি ঘােষণা, সারা বাংলায় প্রতিরােধ গড়ে তােলার নির্দেশ, প্রতিরােধ সংগ্রাম শেষাবধি মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়ার ইঙ্গিত, শত্রুর মােকাবেলায় গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন, যে কোন উস্কানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পরামর্শদান ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার পর ঘােষণা করেন:

    “ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তােল। তােমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মােকাবেলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরাে দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। …. এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”

    বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল একজন দক্ষ কৌসুলির সুনিপুন বক্তব্য উপস্থাপন। বিশেষত ভাষণের শেষ পর্যায়ে তিনি ‘স্বাধীনতার কথা এমনভাবে উচ্চারণ করেন যাতে ঘােষণার কিছু বাকিও থাকলাে না, আবার তার বিরুদ্ধে একতরফা স্বাধীনতা ঘােষণার অভিযােগ উত্থাপন করাও পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর জন্য আদৌ সহজ ছিল না। মনে করা যায় বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা।

    তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সরাসরি ভাবে তা ঘােষণা না করে তিনি কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাস্তবে ২৫ মার্চ, ১৯৭১ রাতের বেলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালিদের উপর অতর্কিতে বর্বর ও রক্তক্ষয়ী আক্রমন চালয়। বঙ্গবন্ধুর ঘােষণায় শুরু হয় মুক্তি যুদ্ধ। ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গবন্ধুর এ কৌশল বা অবস্থান বাংলাদেশ সংগ্রামের পক্ষে ইতিবাচক ফল বয়ে আনে।

    সারকথা

    ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার গঠনের কথা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী তাদের কায়েমী স্বার্থে বাঙালিদের সরকার গঠনের সুযােগ দিতে কিছুতেই রাজি ছিল না। তাই নির্বাচনের ফলাফল নস্যাৎ করে নিজেদের শাসন-শােষণ অব্যাহত রাখার হীন উদ্দেশ্যে তারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত ঘােষণা করা হয়। অপরদিকে আলাপ-আলােচনার নাম করে সময় নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জাহাজভর্তি অস্ত্র ও সৈন্য আনতে থাকে। পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানে অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দেন। ২৫ মার্চ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে।

    পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি প্রশাসন সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। অসহযােগ আন্দোলন চলাকালীন ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) লক্ষ জনতার উত্তাল জনসমুদ্রে ‘মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামের আহবান জানান। শক্রর বিরুদ্ধে তিনি ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তােলার নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ একটি মূল্যবান দলিল। এটি ছিল বস্তুত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা। ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনী সশস্ত্র আক্রমণে ঝাপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

  • মৎস্য উৎপাদন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ২২টি প্রশ্নোত্তর

    মৎস্য উৎপাদন ( স্বাদু পানির মৎস্য , ইলিশ ও চিংড়ি ) সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর দেওয়া হল।আশা করছি তথ্যগুলো আপনাদের সহায়ক হবে।

    ১।স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কত?

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    উত্তর– ২ য় ।

    ২।চাষকৃত মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কত?

    উত্তর– ৬ ষ্ঠ ।

    ৩।বাংলাদেশে প্রাণীজ আমিষের উৎস হিসেবে মাছ থেকে কত শতাংশ পুষ্টি আসে?

    উত্তর– ৫৮% ( তথ্যসূত্রঃ বিশ্বব্যাংক ) ।

    ৪।মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত উপাত্ত অনুযায়ী দেশে বর্তমানে উৎপাদিত মাছের পরিমাণ কত?

    উত্তর– ৪২.৭৭ লাখ মেট্রিক টন ।

    ৫।মাৎস্য উৎপাদনে শীর্ষ জেলা কোনটি?

    উত্তর– ময়মনসিংহ ।

    ৬।বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কোন জেলায় অবস্থিত?

    উত্তর– চাঁদপুর ।

    ৭।রেণু পোনা উৎপাদনে শীর্ষ জেলা কোনটি?

    উত্তর – যশোর ।

    ৮।বর্তমানে দেশের সর্বমোট উৎপাদিত মাছের মধ্যে ইলিশের পরিমাণ কত?

    উত্তর – ১২ % ।

    ৯।বাংলাদেশ বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের কত শতাংশ আহরণ করে?

    উত্তর – ৮০ % ।

    ১০।বাংলাদেশের GDP- তে ইলিশ মাছের অবদান কত শতাংশ?

    উত্তর– ১ % ।

    ১১।ইলিশ বিশ্বের সর্বমোট কতটি দেশে উৎপাদিত হয়?

    উত্তর – ১১ টি দেশে ।

    ১২।ইলিশের সহজলভ্যতার কারণ কি?

    উত্তর – চোরাচালান নিরোধ ও ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ নিধন প্রতিরোধ কার্যক্রম গ্রহণ করা ।

    ১৩।কোন ধরনের পণ্য হিসেবে বাংলাদেশ ইলিশ মাছের স্বত্ব অর্জন করেছে?

    উত্তর– Geographical Indication ( GI ) |

    ১৪। জাটকা কি?

    উত্তর – ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের নিচে ইলিশ মাছের পোনা ( পূর্বের আকার ছিল ৯ ইঞ্চি বা ২৩ সেন্টিমিটার ) ।

    ১৫।বাংলাদেশের White Gold বা ‘ সাদা সোনা ‘ বলা হয় কাকে?

    উত্তর – চিংড়ি ।

    ১৬।’ ব্ল্যাক টাইগার ‘ এবং ‘ ভেন্নামি ‘ কি?

    উত্তর -চিংড়ি মাছের জাতের নাম ।

    ১৭।ভেনামি চিংড়ির বৈজ্ঞানিক নাম কি?

    উত্তর – Whiteleg Shrimp ।

    ১৮।দেশের কোন রপ্তানি পণ্যকে ‘ কালো সোনা ‘ বলা হয়?

    উত্তর– কাঁকড়া ।

    ১৯।মুজিববর্ষ উপলক্ষে মৎস্য অধিদপ্তর ‘ মৎস্য গ্রাম ‘ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কোন স্থানকে?

    উত্তর – নেত্রকোণার দক্ষিণ বিশিউড়া এবং শরীয়তপুরের হাইলশার গ্রামকে ।

    ২০।মুজিববর্ষ উপলক্ষে মৎস্য অধিদপ্তরের নেওয়া নতুন উদ্যোগের পদক্ষেপ ‘ বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ‘ ঘোষণা করা হয় কোন বিলকে?

    উত্তর– চলন বিলকে ।

    ২১।বাংলাদেশ মৎস্য ইন্সিটিউট সম্প্রতি কোন বিলুপ্তপ্রায় মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পুকুরে চাষ করার ব্যবস্থা করেছে ?

    উত্তর– ‘ বৈরালি ‘ মাছ ।

    ২২। International Union for Conservation of Nature ( IUCN ) বাংলাদেশের বৈরালি ‘ মাছকে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ঘোষণা দেয় কত সালে?

    উত্তর – ২০১৫ সালে ।